সিআইপিডি-র ১৯তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত

সিআইপিডি এর ২০১৭ সনের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়ে গেল গত শনিবার, ২৮ এপ্রিল ২০১৮, রাঙ্গামাটি শহরের টিটিসি সড়কের নবনির্মিত নিজস্ব ভবনের সম্মেলন কক্ষে। সকাল ১০ ঘটিকায় শুরু হয়ে বিকাল ৪ ঘটিকায় অনুষ্ঠানসূচির সমাপ্তি ঘটে। এটি সংস্থার ১৯তম সাধারণ সভা। সভাপতির আসন অলঙ্কৃত করেন সিআইপিডি-র সভাপতি প্রফেসর মংসানু চৌধুরী।

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের প্রাক্তন সদস্য ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং সিআইপিডি-র উপদেষ্টা মিজ নিরুপা দেওয়ান, অপর উপদেষ্টা ও এই সংস্থার প্রাক্তন সভাপতি মিসেস শীলা দেওয়ান, সংস্থার অর্থ সম্পাদক ও  প্রাক্তন জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মিজ এঞ্জেলা দেওয়ান এবং সংস্থার সভাপতি ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর মংসানু চৌধুরী মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে সাধারণ সভার শুভ উদ্বোধন করেন।

সিআইপিডি-র কার্যকরী বোর্ড, সাধারণ বোর্ড এর সদস্যবৃন্দ ছাড়াও সভায় উপস্থিত ছিলেন সংস্থার প্রকল্পসমূহের প্রতিনিধিবৃন্দ। এআরএডি প্রকল্প, সমৃদ্ধি প্রকল্প, পার্ল প্রকল্প ও গ্রামীণ ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের প্রতিনিধিবৃন্দদেরকেও সাধারণ সভায় সম্পৃক্ত করা হয়। গ্রামীণ ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের রাঙ্গামাটি শহর শাখা ব্যবস্থাপনা ও স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব প্রতিপালন করে। সংস্থার সাধারণ বোর্ড সদস্য ও প্রাক্তন অর্থ সম্পাদক মিসেস নাই উ প্রু মারমা সভার সঞ্চালক ছিলেন।

সংস্থার প্রথম কার্যকরী কমিটির সদস্য ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মিঃ যশেশ্বর চাকমা উপস্থিত সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তাঁর স্বাগত বক্তব্যে সংস্থার মানোন্নয়নের জন্য সংস্থার সদস্যদের মধ্যে পারষ্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধি ও সংস্থার সাথে কর্মীদের অধিকতর সম্পৃক্ত হওয়ার উপর গুরুত্বারোপ করেন। সংস্থার মানোন্নয়নের নিমিত্তে তিনি নিম্নোক্ত বিষয়সমূহের নিশ্চয়তা বিধানের সুপারিশ করেনঃ * সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় গণতান্ত্রিকতা; * অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা; * রেগুলেটরি সংস্থার সাথে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ; * সংস্থার বিভিন্ন নীতিমালাসমূহের আপডেটকরণ; * কর্মীদের মানোন্নয়নে প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় সুবিধাদি প্রদান ও * জনগণের প্রতি অকৃত্রিম দায়বদ্ধতা।

বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ করতে গিয়ে সংস্থার প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মিঃ জনলাল চাকমা বলেন, ১৯৯৮ ইং সাল থেকে সিআইপিডি’র কার্যক্রম শুরু। প্রতিষ্ঠালাভের পর থেকে সিআইপিডি দেশী-বিদেশী দাতা সংস্থার সহযোগিতায় ইতিমধ্যে ২০টি’র অধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। বর্তমানে ৪টি প্রকল্প- এআরএডি-সিএইচটি প্রকল্প, পার্ল প্রকল্প, সমৃদ্ধি প্রকল্প এবং গ্রামীণ ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের লোকাল এনজিওদের মধ্যে একমাত্র সিআইপিডি-ই পার্বত্য অঞ্চলের আপামর জনগণের জীবনমান উন্নয়নে সফলভাবে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

তিনি আরও বলেন, সিআইপিডি বিভিন্ন প্রকার লোন প্রদান করার পাশাপাশি উদ্যোক্তা উন্নয়নের জন্যও ঋণ প্রদান করে থাকে। কিন্তু এক্ষেত্রে পূর্ণ সফলতা পাওয়া যায়নি বলে তিনি মন্তব্য করেন। সফলতা পাওয়ার জন্য অধিকতর প্রচারণা ও সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন রয়েছে বলে তিনি মনে করেন। বর্তমান কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিয়েও তিনি আলোচনা করেন। “চ্যালেঞ্জ-২০১৮” শিরোনামে তাঁর উল্লেখকৃত চ্যালেঞ্জসমূহ হচ্ছেঃ ব্যবস্থাপনাঃ কর্মীর পরিচালন দক্ষতা, প্রযুক্তিগত দক্ষতা (সফটওয়ার ও কম্পিউটার)। মনিটরিং ও অডিট, রির্পোটিং, কো-অর্ডিনেশন। রিপোর্টিংঃ ডকুমেন্টেশন ও পিপি রাইটিং।

আর্থিকঃ অনুদান প্রাপ্তির সংকট, ক্ষুদ্রঋণের বকেয়া বৃদ্ধি, ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ প্রদান ও ব্যয় বৃদ্ধি (পরিচালন ও চাঁদা)। আইন-শৃঙ্খলাঃ সরকারী পর্যবেক্ষণ, সরকারি বিধিনিষেধ ও স্থানীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতি। পলিসিঃ অডিট। সাধারণ সম্পাদকের সুপারিশ ও সিইও কর্তৃক উল্লেখকৃত চ্যালেঞ্জসমূহ নিয়ে মুক্ত আলোচনায় সংস্থার সভাপতিসহ সকল স্তরের সদস্য ও কর্মীবৃন্দ খোলামেলাভাবে অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনে ২০১৭-১৮ সনের বাজেট অনুমোদিত হয়।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অর্থ সম্পাদক মিজ এঞ্জেলা দেওয়ান অত্যন্ত আনন্দভরা কন্ঠে বলেন যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় এনজিওদের মধ্যে একমাত্র সিআইপিডি-ই নিজস্ব জমিতে নিজস্ব ভবন তৈরী করতে পেরেছে। আমাদের ভবনটি বিশাল হতে না পারে; আজ কিন্তু এ ভবনটির শুভ উদ্বোধন করে ভবনের সম্মেলন কক্ষে আমরা সাধারণ সম্মেলন করছি, এর চাইতে আনন্দ কি হতে পারে। সিআইপিডি-র অগ্রগতিতে নেতৃত্বের যোগ্যতা ও সততার প্রশংসা করতে গিয়ে মিজ এঞ্জেলা দেওয়ান মিঃ জনলাল চাকমার প্রশংসা করেন। উল্লেখ্য যে, মিজ এঞ্জেলা জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা পদ হতে অবসরে গেলে ২৬ এপ্রিল ২০০৯ সনে সিআইপিডি-র সঙ্গে সম্পৃক্ত হন।

সভাপতি প্রফেসর মংসানু চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন,সংস্থার নিজস্ব ভবনে এজিএম করতে পারাটা বড় একটা প্রাপ্তি ও গর্বের বিষয়; যেখানে পাার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি উত্তর সময়ে অনেক এনজিও নিজেদের অস্তিত্বই ধরে রাখতে সমর্থ হয়নি। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, আমাদের সংস্থাটি তার নীতি নৈতিকতা ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা বজায় রাখতে পারলে অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে সমর্থ হবে। তিনি নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে প্রকল্প কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সকল কর্মী ও কমিটির সদস্যদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, সিআইপিডি ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে এবং আমি আশা করি এই সংগঠন একদিন অনেক বড় সংগঠনে পরিণত হবে। সর্বশেষে সকলের সহযোগিতা কামনা ও সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন ও সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

প্রতিবেদকঃ কর্ণিয়া চাকমা।